এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র অ্যাসাইনমেন্ট উত্তর ২০২১ | ৪র্থ সপ্তাহ HSC Civics 1st Paper (পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র) 4th Week Assignment 2021, এইচএসসি Civics Assignment Answer, এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা অ্যাসাইনমেন্টের উত্তর, Hsc Civics Assignment Answer, To repeat, Civics 1st paper Assignment। এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র এসাইনমেন্ট, HSC Civics 1st Paper Assignment 2021, এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র এসাইনমেন্ট ২০২২, HSC Civics (1st Paper) 1st Week Assignment 2021
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র অ্যাসাইনমেন্ট ২০২১
তৃতীয় অধ্যায়: মূল্যবােধ, আইন, স্বাধীনতা ও সাম্য
আইন, স্বাধীনতা ও সাম্যের
পারস্পরিক সম্পর্ক কীভাবে
মূল্যবােধ ও নৈতিকতাকে
প্রভাবিত করে-বিশ্লেষণ কর।
আইন ও নৈতিকতার সম্পর্ক বিশ্লেষন করতে পারবে
স্বাধীনতা ও সাম্যের ধারণা ব্যাখ্যা করতে পারবে
আইন, স্বাধীনতা ও সাম্যের পারস্পরিক সম্পর্ক মূল্যায়ন করতে পারবে
গণতান্ত্রিক মূল্যবােধ ব্যাখ্যা করতে পারবে
সুশাসন প্রতিষ্ঠায় মূল্যবােধের গুরুত্ব বিশ্লেষণ করতেপারবে
মূল্যবােধ ও নৈতিকতার ধারণা
আইন, স্বাধীনতা ও সাম্যের ধারণা
আইন, স্বাধীনতা ও সাম্যের পারস্পরিক
সম্পর্ক ও গুরুত্ব
উত্তর:
মূল্যবােধ ও নৈতিকতার ধারনা মূল্যবােধঃ
ধারণা ও সংজ্ঞা :
যে চিন্তাভাবনা, লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও সংকল্প মানুষের। সামগ্রিক আচার-ব্যবহার ও কর্মকাণ্ডকে নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত করে, তাকেই আমরা সাধারণত মূল্যবােধ বলে থাকি। সমাজজীবনে মানুষের ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত আচার-ব্যবহার ও কর্মকাণ্ড যে সকল নীতিমালার মাধ্যমে পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয় তাদের সমষ্টিকে সামাজিক মূল্যবােধ বলে। বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী বিভিন্নভাবে। মূল্যবােধের বিশেষ করে সামাজিক মূল্যবােধের সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। স্টুয়ার্ট সি. ডড বলেন,”সামাজিক মূল্যবােধ হলাে সে সব রীতিনীতির সমষ্টি, যা ব্যক্তি সমাজের নিকট হতে আশা করে এবং যা সমাজ ব্যক্তির নিকট হতে লাভ করে। ”
এইচ. ডি.ষ্টেইন এর মতে, “ডনসাধারণ যার সম্বন্ধে আগ্রহী, যা তারা কামনা করে, যাকে তারা অত্যাবশ্যক বলে মনে করে, যার প্রতি তাদের অগাধ শ্রদ্ধা বর্তমান এবং যা সম্পাদনের। মাধ্যমে তারা আনন্দ উপভােগ করে তাকেই মূল্যবােধ বলে। ” এম. আর. উইলিয়াম এর মতে, “মূল্যবােধ মানুষের ইচ্ছার একটি প্রধান মানদণ্ড। এর আদর্শে মানুষের আচার-ব্যবহার ও রীতিনীতি নিয়ন্ত্রিত হয় এবং এই মানদণ্ডে সমাজে মানুষের কাজের। | ভালাে-মন্দ বিচার করা হয়। ” এম. ডব্লিউ. পামফ্রে-এর মতে, “মূল্যবােধ হচ্ছে ব্যক্তি বা সামাজিক দলের অভিপ্রেত ব্যবহারের সুবিন্যস্ত প্রকাশ। ”
ক্লাইড কুথােন এর মতে, “সামাজিক মূল্যবােধ হচ্ছে সেসব প্রকাশ্য ও অনুমেয় আচারআচরণের ধারা যা ব্যক্তি ও সমাজের মৌলিক বৈশিষ্ট্য বলে স্বীকৃত।” সমাজবিজ্ঞানী জেন লেনন-এর মতে, “সামাজিক মূল্যবােধ বলতে কোনাে স্থান বা এলাকার ধর্মীয়, ঐতিহ্যপূর্ণ, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক বা জাতীয়। গুণাবলিকে বােঝায়, যা ঐ স্থানের অধিকাংশ বা স্বল্পসংখ্যক লােক পালন করেন। ”
নৈতিকতা:
নৈতিকতার ইংরেজি প্রতিশব্দ ‘Morality” | ইংরেজি Morality শব্দটি এসেছে ল্যাটিন ‘Moralitas’ থেকে যার । অর্থ সঠিক আচরণ বা চরিত্র। গ্রিক দার্শনিক সক্রেটিস, প্লেটো এবং এরিস্টটল সর্বপ্রথম নৈতিকতার প্রতি গুরুত্ব আরােপ করেন। সক্রেটিস বলেছেন, সৎ গুণই জ্ঞান। (virtue is knowledge)। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, জ্ঞানী ব্যক্তিরা অন্যায় করতে পারেন না এবং ন্যায় বােধের। উৎস হচ্ছে জ্ঞান (knowledge) এবং অন্যায়বােধের। উৎস হচ্ছে অজ্ঞতা (ignorance) l
পরবর্তীতে রােমান দার্শনিকরা প্রথাগত আচরণের অর্থে “mas’ কথাটি ব্যবহার করেন। ল্যাটিন এই “masশব্দ থেকেই Morals ও Morality (নৈতিকতা) শব্দের উদ্ভব ঘটেছে। জোনাথন হেইট মনে করেন,“ধর্ম, ঐতিহ্য এবং মানব আচরণ-তিনটি থেকেই। নৈতিকতার উদ্ভব হয়েছে। নীতিবিদ মুর বলেছেন, শুভর প্রতি অনুরাগ ও অশুভর প্রতি বিরাগই হচ্ছে নৈতিকতা ৷
আইন,স্বাধীনতা ও সাম্যব ধারনাঃ
আইনের ধারণা :
আইনের সাধারণ অর্থ হলাে নিয়ম-কানুন বা বিধি-বিধান। ফার্সি আইন’ শব্দটির অর্থ সুনির্দিষ্ট নীতি বা নিয়ম। ইনের ইংরেজি প্রতিশব্দ Law, ইংরেজি aw শব্দটির আভিধানিক। উৎপত্তি টিউটনিক মূল শব্দ Lag থেকে। Law দেৱ অর্থ স্থির বা অপরিবর্তনীয় এবং সকলের ক্ষেত্রে সমভাবে প্রযােজ্য। সমাজের আইন কানুনও স্থির চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ, নক্ষত্র, দিবারাত্রি, জোয়ার-ভাটা সবই স্থির নিয়মের অধীন। সমগ্র বিশ্ব ব্যবস্থায় এক নিয়মের রাজস্ব বিরাজমান।
এই নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটানাের ক্ষমতা কারাে নেই। সমাজের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতাে রাষ্ট্রও একটি প্রতিষ্ঠান। সুনির্দিষ্ট নিয়ম ছাড়া রাষ্ট্রের অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না। সমাজজীবনে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং সুস্থ রাষ্ট্রীয় জীবনযাপনের জন্য মানুষকে কিছু কিছু বিধি-নিষেধ ও নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হ্য। এসব বিধিনিষেধ বা নিমভানুনকে আইন বলে। সুতরাং আইন হচ্ছে ব্যক্তির আচরণ নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত নিয়মের সমষ্টি যা সমাজ ও রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত।
টমাস হবস এর মতে, “জনগণের ভবিষ্যৎ কার্যাবলি নির্দিষ্ট করে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ। কর্তৃপক্ষ যে আদেশ প্রদান করে ভাই আইন”। অধ্যাপক হল্যান্ড এর মতে, “আইন হচ্ছে, সেই সাধারণ নিয়ম যা মানুষের বাহ্যিক আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং সার্বভৌম রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষ যা প্রয়ােগ করেন।
অধ্যাপক স্যালমন্ড এর মতে, “ন্যায সংরক্ষণের তাগিদে রাষ্ট্র যেসব নীতি স্বীকার করে এবং প্রযােগ করে তাই আইন। ” অধ্যাপক গেটেল বলেন, “রাষ্ট্র যেসব নিযুম-কানুন সৃষ্টি বা স্বীকার করে এবং বলবৎ করে তাই শুধু আইন বলে পরিগনিত হয়। ”
আইনের উৎস জন অস্টিনের মতে, আইনের উৎস একটি এবং তা হচ্ছে সার্বভৌমের আদেশ। অধ্যাপক হল্যান্ডের মতে, আইনের উৎস হলাে ছয়টি; যথা :
(১)প্রথা,
(২)ধর্ম,
(৩)বিচারকের রায়,
(৪)ন্যায়বিচার,
(৫)বিজ্ঞানসন্মত আলােচনা,
(৬)আইনসভা
ওপেনহাইম জনমতকেও আইনের উৎস বলে মনে করেছেন। কেননা জনমতের প্রভাবে অনেক সময় সরকার আইন প্রণয়ন বা প্রচলিত আইন পরিবর্তন ও সংশােধন করে থাকে।
আইনের উৎস :
১.প্রথা
২.ধর্ম
৩.বিচারালযের সিদ্ধান্ত
৪.বিজ্ঞানসম্মত আলােচনা
৫.ন্যায়বােধ
৬.আইন পরিষদ
৭.জনমত
৮.প্রশাসনিক ঘােষনা
৯.সংবিধান।
১.প্ৰথা (Custom):
প্রথা আইনের একটি সুপ্রাচীন উৎস। প্রাচীনকাল থেকে যেসব আচার-ব্যবহার, | রীতি-নীতি ও অভ্যাস সমাজে অধিকাংশ জনগণ কর্তৃক। সমর্থিত, স্বীকৃত ও পালিত হয়ে আসছে, তাকে প্রথা বলে। প্রাচীনকালে কোনাে আইনের অস্তিত্ব ছিল না। তখন প্রচলিত প্রথা, অভ্যাস ও রীতি-নীতির সাহায্যে মানুষের আচরণ নিয়ন্ত্রিত হতাে। কালক্রমে অনেক প্রথাই রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত হয়ে আইনের মর্যাদা অর্জন করে। গ্রেট ব্রিটেনের সাধারণ আইন এরূপ প্রথাভিত্তিক।
২.ধর্ম (Religion) :
ধর্মীয় অনুশাসন ও ধর্মগ্রন্থ আইনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। প্রাচীন ও মধ্যযুগে ধর্মীয় বিশ্বাস মানুষের জীবনবােধের খুব গভীরে নিহিত থাকায় অনেক বিধি-নিষেধ ধর্মকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে। এ সমস্ত ধর্মীয় বিধি-বিধানসমূহ রাষ্ট্রীয় সমর্থন লাভ করে পরে আইনে পরিণত হয়। প্রাচীন রােমক আইন ধর্মীয় | বিধানের সমষ্টি ছাড়া আর কিছু ছিল না। হিন্দু সম্প্রদায়ের বিবাহ, উত্তরাধিকার প্রভৃতি আইন ধর্মের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। মুসলিম আইন প্রধানত কুরআন ও সুন্নাহর ওপর নির্ভরশীল পারিবারিক ও সম্পত্তি সংক্রান্ত আইনগুলাে মূলত ধর্ম। থেকে এসেছে।
৩. বিচারালয়ের সিদ্ধান্ত:
বিচারকরা দেশের প্রচলিত আইন অনুসারে বিচার কাজ পরিচালনা করে থাকেন। অস্পষ্ট শব্দগত ব্যাখ্যার কারণে অথবা পরিবর্তিত অবস্থার প্রেক্ষিতে বিচারকরা যখন দেশে বিরাজমান আইন দ্বারা মামলা মকদ্দমার নিস্পত্তি করতে সমর্থ হন না, তখন তারা নিজেদের বিবেক, প্রজ্ঞা ও অভিজ্ঞতা থেকে নতুন নতুন আইন সৃষ্টি করেন এবং প্রযােজনবােধে আইনের যথার্থতা বিশ্লেষণ করেন। পরবর্তীতে এসব বিচারক প্রণীত আইন’ (Judge-Made law) অন্যান্য বিচারকগণ কর্তৃক ব্যাপকভাবে। অনুসৃত হতে থাকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের | বিচারপতি মার্শাল, হিউজেস প্রমুখ বিচারক এভাবে বহু নতুন আইন সৃষ্টি করেছেন।
৪. বিজ্ঞানসম্মত আলােচনা (Scientific Discussion) :
প্রখ্যাত আইন বিশেষজ্ঞদের মূল্যবান ও সারগর্ভ আলােচনা, বিশ্লেষণ এবং লিখিত গ্রন্থসমূহ। আইনের উৎস হিসেবে কাজ করে। বিচারকরা যখন কোনাে বিতর্কিত জটিল | বিষয়ে আইনজ্ঞদের এসব মতামত গ্রহণ করেন তখন তা প্রচলিত আইনের অঙ্গীভূত হয়ে যায়। উদাহরণস্বরূপ ইংল্যান্ডের কোক ও ব্লাকস্টোন এবং আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্রের কোরি ও কেন্ট প্রমুখ আইনবিদের ব্যাখ্যা উভয় দেশের আইনের ব্যাথ্যায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইমাম আবু হানিফার ব্যাখ্যা, হেদায়া-ইআলমগিরি প্রভৃতি গ্রন্থ ইসলামি আইনের ব্যাখ্যায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
৫.ন্যাযবােধ (Equity) :
আইন নির্দিষ্ট ও স্থিতিশীল বিধান। কিন্তু সমাজজীবন পরিবর্তনশীল ও গতিম্য দেশে প্রচলিত আইন যখন যুগােপযােগী বিবেচিত হয় বা পরিবর্তিত অবস্থার প্রেক্ষিতে কঠোর বা অনুপযুক্ত হয়ে ওঠে বিচারকরা তখন তাদের শুভবুদ্ধি, সচেতন বিচারবুদ্ধিমাফিক সেই আইনের ব্যাখ্যা দিয়ে। থাকেন কিংবা নতুন আইন তৈরি করেন। বিচারকের ন্যায়বাধ থেকে এভাবে অনেক নতুন আইন প্রণীত হয়েছে l
৬. আইন পরিষদ (Legislature) :
আধুনিককালে আইনের প্রধানতম। উৎস হচ্ছে আইন পরিষদ। আইনসভা জনমতের সাথে সঙ্গতি রেখে। আইন প্রণয়ন করে আধুনিক রাষ্ট্রীয় আইনের এক বিরাট অংশ জুডে রযেছে আইন পরিষদ কর্তৃক প্রণীত আইন। আইন পরিষদ শুধু নতুন আইন তৈরি করে না, পুরনাে আইন সংশােধন করে তা যুগােপযােগী করে তােলে।
৭. জনমত (Public opinion) :
ওপেনহাইম, হল প্রমুখ মনীষী জনমতকে আইনের গুরুত্বপূর্ণ উৎস বলে উল্লেখ করেছেন। আইনসভা কর্তৃক প্রণীত আইন প্রকৃতপক্ষে জনমতের অভিব্যক্তি জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত আইনসভার সদস্যদের প্রধান দায়িত্ব হলাে জনমতের যথার্থ প্রতিফলন আইন প্রণয়নের সময় তাই জনমতের প্রতি বিশেষভাবে লক্ষ রাখা হয়।
৮.প্রশাসনিক ঘােষণা (Administrative declaration) :
বর্তমানে আইন বিভাগের দায়িত্ব ও পরিধি অনেক বিস্তৃত হয়ে গেছে। এই জটিলতার কারণে আইন বিভাগ ভার কর্তব্য সুচারুরূপে সমাধা করতে সমর্থ হ্য না৷ তাই। আইনসভা ভার নির্বাহী কর্তৃত্বের বহুলাংশ শাসন। | বিভাগীয় কর্মকর্তাদের হাতে অর্পণ করে। এভাবে অর্জিত ক্ষমতাবলে জারিকৃত ঘােষণা ও আইনসমূহকে প্রশাসনিক আইন বলে।
স্বাধীনতা :
স্বাধীনতা’ শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ Liberty | Liberty শব্দটি ল্যাটিন ‘Liber’ থেকে | এসেছে। যার অর্থ “free বা স্বাধীন। সুতরাং শাব্দিক অর্থে মানুষের ইচ্ছানুযায়ী কিছু করা বা বলার ক্ষমতাকে স্বাধীনতা বলা হ্য। সাধারণ ভাষায় স্বাধীনতা। বলতে মানুষের ইচ্ছামত কোনাে কিছু করা বা না করার অধিকারকে বােঝায়। এ দৃষ্টিকোণ থেকে অধীনতামুক্ত অবস্থাই স্বাধীনতা। লেখক ও চিন্তাবিদগণ ভিন্ন ভিন্ন। দৃষ্টিভঙ্গিতে স্বাধীনতার সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। জন স্টুয়ার্ট মিল (John Stuart Mill) তার ‘Essay on Liberty’ গ্রন্থে বলেছেন, “মানুষের মৌলিক শক্তির বলিষ্ঠ, অব্যাহত ও বিভিন্নমুখী প্রকাশই স্বাধীনতা। স্বাধীনতার অর্থ মানুষ কর্তৃক নিজস্ব উপায়ে কল্যাণ অনুধাবন । করা।” তিনি আরাে বলেন, “নিজের ওপর, নিজের দেহ ও মনের ওপর ব্যক্তিই সার্বভৌম।” হার্বাট স্পেনসার (Herbert Spencer) বলেন, “স্বাধীনতা বলতে খুশিমত কাজ করাকে বােঝায়, যদি উক্ত কাজ দ্বারা অন্যের অনুরূপ স্বাধীনতা উপভােগে বাধার সৃষ্টি না হয় l
টি. এইচ. গ্রিন (T, H. Green) বলেন, “যা উপভােগ করার এবং সম্পন্ন করার যােগ্য তা উপভােগ্য ও সম্পাদন করার ক্ষমতাকে স্বাধীনতা বলে” U ) শেলী (Shelly) বলেছেন যে, অতি শাসনের বিপরীত ব্যবস্থাই হলাে স্বাধীনতা।
নিম্নে একটি চিত্র বা ছকের সাহায্যে স্বাধীনতার বিভিন্ন রূপ তুলে ধরা হলাে:
১. ব্যক্তি বা পৌর স্বাধীনতা
২. প্রাকৃতিক স্বাধীনতা
৩. আইনগত স্বাধীনতা
৪. সামাজিক স্বাধীনতা
৫. রাজনৈতিক স্বাধীনতা
৬. অর্থনৈতিক স্বাধীনতা
৭. জাতীয় স্বাধীনতা
সাম্যের সংজ্ঞা ও অর্থ:
সাম্যের অর্থ সমান। সাধারণ অর্থে সাম্য বলতে বােঝায় সব মানুষ সমান। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নীতিগতভাবে স্বীকার করা হয় যে, সকল মানুষই সমান। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, সব মানুষ এক সমান ন্য। শারীরিক ও মানসিক গঠন এবং ক্ষমতা ও যােগ্যতার দিক থেকে। | একজনের সাথে অন্যজনের পার্থক্য রয়েছে। এজন্যই রাষ্ট্রের কাছ থেকে সকলেই সমান ব্যবহার দাবি করতে পারে না। একজন ডাক্তার ও | একজন ঠিকাদার সমাজের কাছ থেকে সমপরিমাণ মর্যাদা ও স্বীকৃতি দাবি করতে পারে না। পৌরনীতিতে সাম্য কথাটির বিশেষ অর্থ রয়েছে। পৌরনীতিতে সাম্যের অর্থ হচ্ছে সুযােগ-সুবিধাদির সমতা। জাতি-ধর্ম-বর্ণ, স্ত্রী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলকে সমান সুযােগ-সুবিধা প্রদানের ব্যবস্থাকে সাম্য বলে।
অধ্যাপক লাস্কি বলেন, “সাম্যের অর্থ হলাে প্রথমত সব ধরনের | বিশেষ সুযােগ-সুবিধার। অনুপস্থিতি এবং দ্বিতীয়ত সকলের জন্য পর্যাপ্ত সুযােগ-সুবিধা উন্মুক্ত রাখা। তার মতে, সাম্যের তিনটি । বিশেষ দিক রয়েছে। যথাঃ
(১)বিশেষ সুযােগ-সুবিধার অনুপস্থিতি,
(২)পর্যাপ্ত সুযােগ-সুবিধা সৃষ্টি এবং
(৩)বেঁচে থাকার জন্য প্রযােজনীয় বিষয়,সম্পদ ও দ্রব্যাদি জাতিধর্ম-বর্ণ, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সমভাবে বণ্টন।
বার্কার(Barker)-এর মতে,“সাম্য কথাটির অর্থ সুযােগ-সুবিধা বা অধিকার বন্টনের ক্ষেত্রে কোনাে প্রকার পার্থক্য সৃষ্টি না করা।”
বরং সাম্য বলতে মানবজীবনের সেই পরিবেশ বা প্রক্র্যিাকেই বােঝায়, যেখানে জাতি-ধর্ম-বর্ণ, নারীপুরুষ নির্বিশেষে সকল নাগরিকের সমান সুযােগ-সুবিধা প্রদান করা হ্য, সুষম পরিবেশ সকলকে সমানভাবে আত্মবিকাশের সুযােগ প্রদান করা হয়।
সাম্যের বিভিন্ন রূপ বা শ্রেণিবিভাগ :
সাম্য একটি অখণ্ড ধারণা। সাম্যের কোনাে প্রকারভেদ হয় না। যেমন অর্থনৈতিক সাম্য প্রতিষ্ঠিত হলে অন্যান্য সাম্য আপনা থেকেই প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। তবুও বিভিন্ন ধরনের সুযােগের জন্য সাম্যকে নিম্নলিখিত উপায়ে শ্রেণিবিভাগ করা হয়ে থাকে।
1. স্বাভাবিক
2. সামাজিক
3. রাজনৈতিক
4. অর্থনৈতিক
5. আইনগত
6. নাগরিক
7. ব্যক্তিগত
আইন, স্বাধীনতা ও সাম্যের পারস্পরিক সম্পর্ক ও গুরুত্ব:
আইন ও স্বাধীনতার সম্পর্ক সংক্রান্ত পরস্পর বিরােধী দুটি। মতবাদ প্রচলিত রয়েছে। প্রথম দলটি মনে করেন, আইন ও স্বাধীনতা গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত। সুতরাং স্বাধীনতা আইনের ওপর নির্ভরশীল। এরিস্টটল, মন্টেস্কু, রিচি, উইলােবিবার্কার, লক প্রমুখ মনীষী এই মতের সমর্থক। বার্কাবের ভাষায়, “স্বাধীনতা ও আইনের বিরােধ নেই।” আবার কেউ কেউ মনে করেন যে, আইন ও স্বাধীনতা পরস্পর বিরােধী। জন স্টুয়ার্ট মিল, হার্বার্ট স্পেনসার, এ. ভি. ডাইসি, গডউইন প্রমুখ মনীষী এই দলের সমর্থক। ডাইসির মতে, “একটি বেশি হলে, অপরটি কমে যায়।
”স্পেন্সার বলেন, “আইন ও স্বাধীনতা পরস্পর বিরােধী।” আইন ও স্বাধীনতার সম্পর্ক নির্ণয়ের ক্ষেত্রে উভয় মতবাদেই । অযৌক্তিক অতিরঞ্জন বা বাড়াবাড়ি রয়েছে। অনিয়ন্ত্রিত, অবাধ স্বাধীনভা একদিকে যেমন স্বেচ্ছাচারিতার নামান্তর তেমনি সব আইনস্বাধীনতাকে সংরক্ষণ করে না। গভীরভাবে লক্ষ করলে দেখা যায় যে, আইন ও স্বাধীনতা পরস্পরবিরােধী নয়, বরং পরস্পর সম্পর্কযুক্ত উভয়ের সম্পর্ক নিম্নরূপ:
১. আইন স্বাধীনতার শর্ত ও ভিত্তিঃ
আইন স্বাধীনতাকে সহজলভ্য করে তােলে। আইনের নিয়ন্ত্রণ ছাড়া যথার্থভাবে স্বাধীনতা ভােগ করা যায় না। আইনের অবর্তমানে সবলের অত্যাচারে দুর্বলের অধিকার বিপর্যন্ত হয়ে পড়ে। আইন না থাকলে সমাজজীবনে ভাবহ অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলতার রাজত্ব শুরু হয়। উইলােবি বলেছেন, “নিয়ন্ত্রণ আছে বলেই স্বাধীনতা রক্ষা পায়। বিস্তৃত স্বাধীনতার গ্রন্ধনভিত্তিত শতই হলাে আইন।
২. আইন স্বাধীনতার রক্ষাকবচঃ
আইন আছে বলে স্বাধীনতা ভােগ করা যায়। আইনের কর্তৃত্ব আছে বলেই। ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব বিকাশের অনুকূল পরিবেশ গড়ে ওঠে। আইনের অবর্তমানে স্বাধীনতা স্বেচ্ছাচারিতায় পরিণত হয়। | ৫ নং বিধানে মৌলিক অধিকারসমূহ লিপিৱদ্ধ থাকার কারণে সরকার বা অন্য কোনাে কর্তৃপক্ষ জনগণের স্বাধীনতা হরণ করতে পারে না। স্বাধীনতা লঘন ও হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে আদালতে সাংবিধানিক ও সাধারণ আইনের মাধ্যমে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা চলে। এ জন্যই লক বলেছেন যে, “যেখানে আইন থাকে না সেখানে স্বাধীনতা থাকতে পারে না। ”
৩. আইন স্বাধীনতার অভিভাবক :
আইন শাসকগােষ্ঠীর স্বেচ্ছাচারিতার হাত থেকে জনগণকে রক্ষা করে। আইন সংযত ও নিটি সীমারেখার গণ্ডিতে সকলকে আবদ্ধ রেখে স্বাধীনতা বজায় রাখে। আইন আছে বলেই ব্যক্তি | বা প্রতিষ্ঠানের সমাজ বিরােধী কার্যকলাপের ফলে স্বাধীনতা| বিঘ্নিত হ্য না।।
৪. আইন স্বাধীনতার বক্ষক:
আইন আছে বলে স্বাধীনতা | উপভােগ করা যায়। আইন না থাকলে প্রকৃত ।। স্বাধীনতা থাকতে পারে না। স্বাধীনতাকে রক্ষা করা এবং সকলের নিকট উপভােগ্য করে তােলাই আইনের লক্ষ্য।
৫. আইন স্বাধীনতার ক্ষেত্র প্রসারিত করে:
আইনের মাধ্যমে স্বাধীনতার পরিধি সম্প্রসারিত হ্য। রাষ্ট্র আইনের দ্বারা এমন এক সামাজিক পরিবেশ সৃষ্টি করে। যেখানে সুন্দর, সভ্য জীবনযাপনের অনুকূল অবস্থা। প্রতিষ্ঠিত হয়। আইন ও স্বাধীনতার এরূপ ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক লক্ষ করেই রিচি বলেছেন, “স্বাধীনতা বলতে যদি আত্মবিকাশের জন্য প্রয়ােজনীয় সুযােগ-সুবিধা বােঝায় তা হলে তা নিশ্চিতভাবেই আইনের দ্বারা সৃষ্টি হয়।”
স্বাধীনতা ও সাম্যের মধ্যে গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান আইন সাম্যকে অর্থবহ করে তােলে রাষ্ট্র আইন প্রয়ােগ করে অসাম্যকে দূর করতে পারে। সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করতে যুগে যুগে অনেক আইন সহায়তা করছে। ভারতে আইন করে। অস্পৃশ্যতা দূর করা হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকায় আইন করে বর্ণভেদ প্রথা দূর করা হয়েছে এবং পৃথিবীর অনেক দেশেই আইন করে সকল প্রকার অসাম্য দূর করার চেষ্টা করা হয়েছে এবং এখনাে হচ্ছে।
সাম্য ও স্বাধীনতার সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। সাম্য নিশ্চিত করার জন্য। স্বাধীনতার প্রযােজন। স্বাধীনতার শর্ত পূরণ না হলে সাম্য প্রতিষ্ঠিত হয় । আবার স্বাধীনতাকে ভােগ করতে চাইলে সাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তাহলে দুর্বলের সাম্য সবলের সুবিধায় পরিণত হবে। সাম্য ও স্বাধীনতা। একই সাথে বিরাজ না করলে গণতান্ত্রিক অধিকার ভােগ করার প্রশ্নই ওঠে। না। সাম্য উচু নীচুর ভেদাভেদ দূর করে, আর স্বাধীনভা সমাজের সুযােগ সুবিধাগুলাে ভােগ করার অধিকার দান করে।
কোল এ জন্যই বলেছেন যে, “অর্থনৈতিক সাম্য ব্যতীত রাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্থহীন।” | আব, এইচ, টনি এব মতে “স্বাধীনতা বলতে যদি মানবতার নিরবচ্ছিন্ন সম্প্রসারণ বােঝায়, তাহলে সেই স্বাধীনতা সাম্যভিত্তিক সমাজেই শুধু। সম্ভব। ”
এজন্যই অধ্যাপক পােলার্ড বলেছেন যে, “স্বাধীনতার সমস্যার একটিমাত্র সমাধান রয়েছে। সাম্যের মাঝেই তা নিহিত। ” আদর্শ হিসেবে সাম্য ও স্বাধীনতার সুসমন্বিত রূপ প্রকাশ পায় ১৭৭৬ সালে, আমেরিকার স্বাধীনতার ঘােষণা পত্রে এবং ১৭৮৯ সালে ফরাসি বিপ্লবের | ঘােষণায়।
উপসংহার:
সুতরাং বলা যায় যে, স্বাধীনতা ও সাম্যের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। স্বাধীনতা ও সাম্য একে অপরের পরিপূরক ও সহায়ক। স্বাধীনতা ও সাম্য একই সাথে বৃহত্তর পরিসরে ব্যক্তি ও সমাজজীবনকে প্রভাবিত ও নিয়ন্ত্রণ করে। স্বাধীনতাকে অর্থবহ করতে হলে সাম্য থাকতে হবে। সাম্য না থাকলে ব্যক্তি তথা সমাজজীবন পূর্ণতা প্রাপ্ত হয় না। সুতরাং স্বাধীনতা ও সাম্য বৃহত্তর পরিসরে ব্যক্তি ও সমাজজীবনকে। প্রভাবিত ও নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এজন্যই বলা হ্য যে, স্বাধীনতা ও সাম্যের মধ্যে রয়েছে একটি দ্বি-মাত্রিক সমগ্রতা।
N.B:শিক্ষার্থীদের জন্য আমাদের পরামর্শ, আমরা যেভাবে উত্তর/সমাধান দিব সেটা হুবহু না লিখে উত্তরটা নিজের ভাষায় লেখার চেষ্টা করতে l এতে করে শিক্ষার্থীরা অ্যাসাইনমেন্ট বা নির্ধারিত কাজে ভালো নম্বর অর্জন করতে পারবে ।
প্রতি সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্ট পাওয়ার জন্য kormojog.com এর ফেসবুক পেইজ কর্মযোগ লাইক এবং ফলো করে রাখ।
nice