এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ২য়-সপ্তাহ এসাইনমেন্ট উত্তর 2021
প্রিয় এইচএসসি মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীরা। প্রতিবারের মত এবারও আমরা এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন দ্বিতীয় পত্রের সঠিক এবং পূর্ণাঙ্গ সমাধান প্রকাশ করেছি। এইচএসসির সকল বিষয়ের সমাধান গুলো আমাদের বিশ্বের সকল শিক্ষকগণ এইচএসসি এর পাঠ্যপুস্তক বই এবং নির্ভরযোগ্য রেফারেন্স বই থেকে সংগ্রহ করে পোস্ট আকারে আপলোড করে থাকে। যেহেতু এইচএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্র ছাত্রীদেরকে অ্যাসাইনমেন্ট এর মাধ্যমে দ্বিতীয় বর্ষে উত্তীর্ণ করা হবে। তাই আমাদের প্রকাশিত এসাইনমেন্ট এর উত্তর গুলো আপনাকে সর্বোচ্চ নম্বর পেতে সহযোগিতা করবে।
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ২য় পত্র অ্যাসাইনমেন্ট উত্তর ২০২১ | ২য় সপ্তাহ
এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ২য় সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্ট পৌরনীতি ও সুশাসন দ্বিতীয় পত্র উত্তর:
অ্যাসাইনমেন্টঃ
লাহোর প্রস্তাবের প্রেক্ষাপট হিসেবে বঙ্গভঙ্গ, মুসলিম লীগ এবং দ্বিজাতি তত্ত্বের উপর একটি নিবন্ধ লেখ।
নির্দেশনা /সংকেতঃ
- বঙ্গভঙ্গের কারণ ও ফলাফল।
- মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট ও গুরুত্ব।
- দ্বিজাতি তত্ত্ব ও লাহোর প্রস্তাবের বৈশিষ্ট্য ও তাৎপর্য।
শিখনফলঃ
- বঙ্গভঙ্গের (১৯০৫) কারণ ব্যাখ্যা করতে পারবে।
- বঙ্গভঙ্গের ফলাফল বিশ্লেষণ করতে পারবে।
- ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদের কারণ ও তার প্রতিক্রিয়া মূল্যায়ন করতে পারবে।
- মুসলিম লীগ (১৯০৬) প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট বর্ণনা করতে পারবে।
- মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব বিশ্লেষণ করতে পারবে।
- দ্বিজাতি তত্ত্বের তাৎপর্য মূল্যায়ন করতে পারবে। লাহোর প্রস্তাবের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে পারবে।
- লাহোর প্রস্তাবের গুরুত্ব বিশ্লেষণ করতে পারবে।
উত্তর:
লাহোর প্রস্তাবের প্রেক্ষাপট হিসেবে বঙ্গভঙ্গ, মুসলিম লীগ এবং দ্বিজাতি তত্ত্বের উপর একটি নিবন্ধ
বাংলাদেশ তথা সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশের রাজনৈতিক ও শাসনতান্ত্রিক বিকাশে ব্রিটিশ শাসনের প্রভাব অনস্বীকার্য। ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধের মধ্য দিয়ে গােড়াপত্তন হওয়া ব্রিটিশ শাসন কেবল রাজনৈতিক ক্ষেত্রেই পরিবর্তন আনেনি, এ অঞ্চলের জনগােষ্ঠীর সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় ক্ষেত্রে সুদূর প্রসারী প্রভাব ফেলেছে। এ শাসন ১৭৫৭ থেকে শুরু করে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত অর্থাৎ একশত নব্বই বছর বহাল ছিল।
অনেক আন্দোলন সংগ্রাম, সংস্কার ও রক্তক্ষয়ের মধ্য দিয়ে ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের। জন্ম হয়। ক্ষুদিরাম, সূর্যসেন, ইলা মিত্রের মতাে বিপ্লবীরা যেমন রক্ত দিয়েছে তেমনি ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসন মহাত্না গান্ধী, নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, হােসেন শহীদ সােহরাওয়াদী এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতাে অনেক নেতারওজন্ম দিয়েছে। সমাজ, শিক্ষা-সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে যুক্ত হয়েছে অনেক নতুন রীতি-নীতি, আইন ও পদ্ধতি।
বঙ্গভঙ্গ: বঙ্গভঙ্গ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে যে আন্দোলন হয়েছিল তাই বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন নামে পরিচিত। বঙ্গভঙ্গ বাংলার ইতিহাসে একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ১৯০৫ সালের ১৬ অক্টোবরে তৎকালীন বৃটিশ ঔপনিবেশিক সরকারের বড়লাট লর্ড কার্জনের আদেশে বঙ্গভঙ্গ কার্যকর করা হয়।
বঙ্গভঙ্গের কারণ:বঙ্গভঙ্গের মূল যে কারণ তা হল, বাংলা প্রেসিডেন্সির বিশাল আয়তন হওয়ার কারণে ব্রিটিশরা এদেশেকে শাসন-শুনে বেশি সুবিধা করতে পারছে না। অপরদিকে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেসের (আই.এন.সি) ব্রিটিশ বিরােধী বিভিন্ন কার্যকলাপকে থামিয়ে দিতে বাংলাকে বিভাজন করার প্রয়ােজন মনে করেন। এর পরেও বঙ্গভঙ্গের পেছনে আরাে সুদূর প্রসারি কারণ আছে যা নিচে উল্লেখ করা হলঃ
১। প্রশাসনিক কারণঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞানিগণ মনে করেন বঙ্গভঙ্গের প্রধান কারণ হল প্রশাসনিক কারণ। বাংলা ছিল বিশাল প্রদেশ যার আয়তন ছিল ১ লক্ষ ৮৯ হাজার বর্গমাইল। ফলে শাসনভার ছিল কষ্টসাধ্য। লর্ড কার্জন প্রথম থেকেই একে প্রশাসনিক সংস্কার নামে অভিহিত করেন।
২। রাজনৈতিক কারণ: পাশ্চাত্যে শিক্ষার প্রসারের ফলে জনগণের রাজনৈতিক চেতনা বৃদ্ধি পায় এবং জাতীয়তাবাদী আন্দোলন গড়েউঠতে থাকে। এসব আন্দোলনের কেন্দ্রস্থল ছিল কলকাতা। ঢাকাকে রাজধানী করে সরকার আন্দোলনকে সত্মিমিত করতে সচেষ্ট হয়। এছাড়া ব্রিটিশদের বঙ্গভঙ্গের পেছনে নিম্নোক্ত তিনটি উদ্দেশ্য নিহিত ছিল
ক) জাতীয়তাবাদী আন্দোলন নস্যাৎ করা :১৮৮৫ সালে ‘ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস’ নামক একটি রাজনৈতিক দলের জন্ম হয়। কংগ্রেসের নেতৃত্বে সমগ্র ভারতে বিশেষ করে ‘বাংলা প্রেসিডেন্সিতে” জাতীয়তাবাদী আন্দোলন শুরু হয়। এ আন্দোলনের কেন্দ্রস্থল ছিল কলকাতা শহর। সুচতুর ইংরেজ সরকার এ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে নস্যাৎ এবং আন্দোলনকারীদের মেরুদন্ড ভেঙ্গে দেয়ার জন্য বঙ্গভঙ্গ করতে উদ্যোগী হয়। ব্রিটিশ সরকার ‘ভাগ কর ও শাসন কর’ নীতি অবলম্বন করে।
খ) মুসলমানদের দাবি: স্যার সলিমুলস্নাহ বঙ্গভঙ্গের পক্ষে আন্দোলন শুরু করেন। তিনি জনগণকে বােঝাতে চেষ্টা করেন যে, নতুন প্রদেশ সৃষ্টি হলে পূর্ববাংলার মুসলমানরা নিজেদের ভাগ্যোন্নয়নের সুযােগ পাবে। হিন্দু সম্প্রদায় প্রভাবিত কলকাতার উপর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ৰেত্রে নিভরশীলতা হ্রাস পাবে। মুসলমান জনগণ চাকরি ও ব্যবসায়-বাণিজ্যে উন্নতি লাভ করতে পারবে।
গ) আধা-সামনত্মতন্ত্র প্রতিষ্ঠা: পূর্ব বাংলায় আধা-সামনত্মতান্ত্রিক রাজনৈতিক কাঠামাে প্রতিষ্ঠা প্রয়াসী একটি এলিট শ্রেণী গড়ে ওঠে। তারা বঙ্গভঙ্গের প্রতি সমর্থন জানায়।
৩। অর্থনৈতিক কারণঃ ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গের পূর্বে শিল্প, ব্যবসায়-বাণিজ্যি, অফিস-আদালত, কলকারখানা, স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি প্রায় সব কিছুই কলকাতার কেন্দ্রিভূত ছিল। ফলে পূর্ববঙ্গের মুসলমানরা সর্বত্রই পিছিয়ে পড়েছিল। অধিকাংশ মুসলমান জনগণ তখন ভাবতে শুরু করে যে, বঙ্গভঙ্গ হলে তারা অর্থনৈতিক উন্নতি অর্জনের সুযােগ পাবে। এ জন্য পূর্ববঙ্গের মুসলমান জনগণ বঙ্গভঙ্গের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন জানায়।
বঙ্গভঙ্গ রদের কারণঃ একটি স্থায়ীব্যবস্থা হিসেবে ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ করা হলেও মাত্র ছয় বছরের মাথায় ১৯১১ সালের ১২ ডিসেম্বর তা রদ করা হয়।
১, কংগ্রেস ও হিন্দুদের উগ্র জাতীয়তাবাদী আন্দোলনঃ বঙ্গভঙ্গের ফলে সৃষ্ট নতুন প্রদেশে মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ায় কায়েমি স্বার্থবাদী হিন্দুরা স্বাভাবিকভাবে তা গ্রহণ করতে পারে নি। ফলে কংগ্রেসের হিন্দু নেতৃবৃন্দ বাঙালিদেরকে একটি স্বতন্ত্র জাতি এবং বঙ্গভঙ্গকে বঙ্গমাতার অঙ্গচ্ছেদ’ বলে উল্লেখ করে বাঙালি জাতীয়তাবাদের নামে এর বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তােলে।
২, স্বদেশী আন্দোলনঃ বঙ্গভঙ্গের পূর্বেই স্বদেশী আন্দোলনের আদর্শ গড়ে উঠলেও বঙ্গভঙ্গের পর থেকে কংগ্রেস ও হিন্দু নেতৃবর্গ এর আদর্শকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার শুরু করে। প্রধানত ব্রিটিশ পণ্য বর্জনের মাধ্যমে আন্দোলন চাঙ্গা হয়ে উঠে এবং সাংস্কৃতিক জীবনেও তার প্রবেশ লক্ষ করা যায়। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও স্বদেশীমূলক গান যেমন- “আমার সােনার বাংলা’ প্রভৃতি রচনা করে আন্দোলনকে বেগবান করে তােলার প্রয়াস পান।
৩, বুদ্ধিজীবীদের বিরােধিতাঃ সমকালীন বুদ্ধিজীবীদের প্রধান অংশই বঙ্গভঙ্গের বিরােধিতায় সােচ্চার হয়ে। ব্রিটিশ সরকারের মনােবলকে দুর্বল করে দিয়েছিল।
৪, কলকাতাকেন্দ্রিক জমিদার ও ব্যবসায়ী শ্রেণীর বিরােধিতাঃ বঙ্গভঙ্গের ফলে হিন্দু জমিদার শ্রেণী যেমন পূর্ববাংলায় তাদের জমিদারি হারায়, তেমনি চট্টগ্রামে নতুন বন্দর চালু হওয়ায় কলকাতাকেন্দ্রিক ব্যবসায়ী শ্রেণীর একচেটিয়া বাণিজ্যিক আধিপত্য ক্ষুণন হয়। তাছাড়া সংবাদপত্র ব্যবসায়ী ও আইন ব্যবসায়ীরাও তাদের ব্যবসায়িক ক্ষতির কথা চিন্তা করে বঙ্গভঙ্গের তীব্র বিরােধিতা করতে শুরু করে।।
৫, সন্ত্রাসবাদী আন্দোলনঃ বঙ্গভঙ্গ বিরােধী আন্দোলন বিভিন্ন ধারায় প্রবাহিত হয়ে শেষ পর্যন্ত সন্ত্রাসবাদী আন্দোলনের রূপ পরিগ্রহ করে। ব্রিটিশ বিরােধী হিংসাত্মক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে শুরু হয় গুপ্তহত্যা। ফলে ব্রিটিশ সরকার বাধ্য হয়ে বঙ্গভঙ্গ রদ ঘােষণা করে।
ব্রিটিশ সরকার স্বীয় রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য প্রশাসনিক সুবিধার নামে ১৯০৫ সালে। বঙ্গভঙ্গ কাযর্কর করলেও বিভিন্নমুখী বিরােধিতার কারণে শেষ পর্যন্ত তা রদ করতে বাধ্য হন। যা স্বার্থবাদী হিন্দুদের নিকট ইতিবাচক হলেও মুসলমানদের মধ্যে চরম হতাশা ও ক্ষোভের জন্ম দেয়।
বঙ্গভঙ্গ রদের প্রতিক্রিয়া মুসলমানদের প্রতিক্রিয়া: ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ ও নতুন প্রদেশ গঠন পূর্ববঙ্গে মুসলিম সমাজে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। উন্নয়নের ছোঁয়া লাগে ঢাকায়। ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এর প্রভাব পড়ে। শিক্ষা ক্ষেত্রে অগ্রগতি সম্পর্কে এক হিসাব থেকে দেখা যায় যে, ১৯০৫-১১ পর্যন্ত এই ৫ বছরে মুসলমান শিক্ষার্থীদের সংখ্যা ৩৫% বৃদ্ধি পায়।
বিশেষ করে শিক্ষিত মুসলমানদের জন্য অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও শিক্ষাক্ষেত্রে সুবিধা বৃদ্ধির পথ সুগম হয়। তাই বঙ্গভঙ্গ রদের ফলে মুসলমানরা মর্মাহত হয় এবং ব্রিটিশ সরকারকে চরম বিশ্বাসঘাতক ও প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারী বলে আখ্যায়িত করে। নওয়াব ওয়াকার। উল মূলক বলেন, বঙ্গভঙ্গ রদের ফলে ভবিষ্যতে মুসলমানরা ব্রিটিশ সরকারের কোনাে কথা ও কাজে আস্থা রাখতে পারবে না।
এছাড়া ব্রিটিশ সরকারের সমালােচনা করেন মওলানা মােহাম্মদ আলী এবং নবাবসলিমুল্লাহ। বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে হিন্দুদের বিক্ষোভের ফলে বাঙালি মুসলমানরা অবাঙালি মুসলমানদের সাথে সহযােগিতার নীতি গ্রহণ করে। ১৯০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত মুসলমানদের একমাত্র দল মুসলিম লীগ।
প্রথম থেকেই বঙ্গভঙ্গের পক্ষে ছিল। বঙ্গভঙ্গ রদকে কেন্দ্র করে মুসলমানরা মুসলিম লীগের পতাকাতলে সমবেত হতে থাকে। এরপর মুসলিম লীগ মুসলমানদের মুখপাত্রে পরিণত হয়। তারা মুসলমানদের স্বতন্ত্র নির্বাচন দাবি করে যা ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক স্বীকৃত হয়। ১৯১৩ সালে লক্ষেeীতে মুসলিম লীগের বার্ষিক অধিবেশনে ভারতের জন্য স্বরাজ দাবি দলের কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত করা হয়। মুসলমান তরুণরা রাজনৈতিক কর্মসূচি পরিবর্তনের দাবি জানায়।
নবাব সলিমুল্লাহ যিনি মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখেন বঙ্গভঙ্গের পর স্বেচ্ছায় রাজনীতি থেকে অবসর নেন। বঙ্গভঙ্গের পরের বছর লর্ড হার্ডিঞ্জ ঢাকা এলে তিনি ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানান। অবশ্য তাঁর জীবদ্দশায় না হলেও ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়।
পরবর্তীকালে ১৯৩২ সালে সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে নির্বাচন স্বীকৃত হয় এবং বাংলার মুসলমানদের জন্য শতকরা ৪৮ ভাগ আসন দেয়া হয়। ১৯৩৭-১৯৪৭ পর্যন্ত সময়কালে পূর্ববঙ্গের রাজনীতিতে মুসলমানদের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়।
হিন্দুদের প্রতিক্রিয়া: বঙ্গভঙ্গ রদ করায় হিন্দুগণ সন্তোষ প্রকাশ করে। কংগ্রেস সভাপতি অম্বিকাচরণ মজুমদার ব্রিটিশ সরকারকে অভিনন্দন জানান। কংগ্রেসের ইতিহাস লেখক পট্টভি সীতারাময় লিখেছেন, ১৯১১ সালে কংগ্রেসের বঙ্গভঙ্গ বিরােধী আন্দোলন জয়যুক্ত হয়। বঙ্গভঙ্গ রদ করে ব্রিটিশ সরকার ভারত শাসনে ন্যায়নীলিপিছিয়দ
হিন্দু-মুসলমান বিদ্বেষ: এন.সি. চৌধুরী তাঁর আত্মজীবনীতে যথার্থই বলেছেন,”বাংলা বিভাগ হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে একটি স্থায়ী বিরােধের কারণ রেখে যায় এবং মুসলমানদের প্রতি একটি চরম ঘৃণা আমাদের মধ্যে স্থায়িত্ব লাভ করে। ফলে বন্ধুত্বের সর্বপ্রকার অন্তরঙ্গতা দূর হয়। সর্বত্র এই বিদ্বেষ ছড়িয়ে পড়ে।
ফলে হিন্দু-মুসলমানরা একে অপরের কাছ থেকে দূরে সরে যায়। বেশ কয়েকটি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাও সংঘটিত হয়। এরপর যেকোন রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের মাপকাঠি নির্ণীত হয় ধর্ম পরিচয়ে। অবশেষে ধর্মের ভিত্তিতেই ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্ত হয়। পূর্ব বাংলার সিংহভাগ আপামর জনসাধারণের (ধর্ম নির্বিশেষে) মধ্যে পশ্চিম বাংলার উচ্চবর্ণিয় হিন্দু জমিদারদের অব্যাহত সামন্ততান্ত্রিক শােষনের বিষয়ে ব্যপক সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছিল।
কোলকাতা কেন্দ্রীক অখণ্ড বাংলার বিপরীতে ঢাকা কেন্দ্রীক আঞ্চলিকতার যুক্তি সার্বজনীন প্রতিষ্ঠা। পেয়েছিল, কারন বঙ্গভঙ্গ রদ মানে ছিল ১৯০৫-১৯১১ এর মধ্যে পূর্ববাংলার জনগণের শিক্ষা, বিচার ব্যবস্থা, ভূমি প্রশাসনে যা কিছু দৃশ্যমান অগ্রগতি হচ্ছিল তাকে বাধাগ্রস্থ করার পায়তারা।
অন্যদিকে বঙ্গভঙ্গ রদ আন্দোলন ও স্বদেশী আন্দোলনের ফলে পশ্চিম বাংলায় হিন্দু সমাজের মধ্যে। এমন একটি সাম্প্রদায়িক প্রতিক্রিয়াশীল নেতৃত্ব সৃষ্টি হয়েছিল যা পরবর্তীতে অখণ্ড বাংলার বদলে খন্ডিত। বাংলার পক্ষেই অবস্থান নিয়েছিল। এটাকে rony of fate বলতে পারেন।
বঙ্গভংগ রদ আন্দোলন পূর্ব বাংলার মুসলমান কৃষক এবং মতুয়া, সূদ্র ও অচ্ছুতদের একতাবদ্ধ করেছিল যা পরবর্তীতে পাকিস্তান আন্দোলনের পাল্লা ভারী করেছিল।
বঙ্গভঙ্গের মূল্যায়ন: বঙ্গভঙ্গের ফলে পূর্ব বাংলা তাৎক্ষণিক কিছু সুবিধা পেলেও অখন্ড বাংলা চেতনার জন্য তা ছিল আত্মঘাতিমূলক। বঙ্গভঙ্গের প্রভাব পরবর্তী চার দশকের রাজনীতিতে ব্যাপকভাবে পরিলক্ষিত হয়েছে। সত্যিকার অর্থে বঙ্গভঙ্গের ফলে ব্রিটিশদেরই জয় হয়েছে। নিম্নে বঙ্গভঙ্গের মূল্যায়ন করা হলাে
১. ব্রিটিশদের বিভেদনীতির জয়:বঙ্গবঙ্গের ফলে ব্রিটিশ শাসকদের অনুসৃত ভাগ কর ও শাসন কর নীতি (Divide & Rule) জয়যুক্ত হয়। ব্রিটিশ শাসকগণ কৌশলে হিন্দু ও মুসলমান জনগণের মধ্যে। সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ সৃষ্টি করতে সমর্থ হয়। ব্রিটিশ শাসকগণ কৌশলে হিন্দু ও মুসলমান জনগণের মধ্যে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ সৃষ্টি করতে সমর্থ হয়। ভারতের বৃহত্তর দুটি সম্প্রদায় এর ফলে চিন্তা চেতনার দিক থেকে বিভক্ত হয়ে পড়ে।
২. সর্বভারতীয় জাতীয়তাবাদী আন্দোলন নস্যাৎ: বঙ্গভঙ্গের দ্বারা ব্রিটিশ শাসকগণ কৌশরে কলিকাতাকেন্দ্রিক সর্বভারতীয় জাতীয়তাবাদী আন্দোলন নস্যাৎ করার সুযােগ লাভ করে। কেননা, কলিকাতা শহরের লেখক সাহিত্যিক বুদ্ধিজীবী, অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিবিদগণ পূর্ববাংলার উপর নির্ভরশীল ছিল। বঙ্গবঙ্গের ফলে তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
৩. উগ্র হিন্দু জাতীয়তবাদের উত্থান: ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের ফলে ভারতীয় রাজনীতিতে বিশেষ করে বাংলা, পাঞ্জাব ও মহারাষ্ট্রে নাশকতামূলক কার্যকলাপ বৃদ্ধি পায়। সমগ্র ভারতে উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদী। চিন্তা চেতনা বিস্তৃত হয়।
৪, ভারত বিভক্তি: বঙ্গভঙ্গ হিন্দু মুসলিম জনগণের মধ্যে সাম্প্রদায়িক চেতনার বিষবৃক্ষ রােপন করে। এই সাম্প্রদায়িক চতুনাই পরবর্তীতে ভারত বিভাগকে অত্যাসনড়ব করে তােলে।
৫. মুসলিম জাতীয়তাবাদের প্রসার : বঙ্গভঙ্গের ফলে মুসলিম জাতীয়তাবাদের বীজ রােপিত হয়। মুসলমান জনগণ নিজেদের পৃথক অস্তিত্ব ও স্বার্থ রক্ষার জন্য সংগঠিত হতে থাকে। তারা ১৯০ সালে নিখিল ভারত মুসলিম লীগ নামক একটি পৃথক রাজনৈতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে।।
৬. পূর্ববঙ্গের উন্নয়ন: বঙ্গভঙ্গের ফলে পূর্ববঙ্গে বেশ কিছু দৃষ্টিনন্দন ভবন, অফিস আদালত গড়ে ওঠে। অর্থনৈতিক কর্মকান্ডেও গতি আসে।
মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট ও গুরুত্ব:
সিমলা দৌত্যের (১৯০৬ খ্রি.) সাফল্য ভারতীয় মুসলমান নেতাদের নিজ সম্প্রদায়ের স্বার্থরক্ষার জন্য পৃথক একটি সর্বভারতীয় মুসলিম রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তালাের ব্যাপারে উৎসাহিত করেছিল। এরই পরিণতি হিসেবে ১৯০৬-এর ৩০ ডিসেম্বর ঢাকার নবাব সলিমুল্লাহের উদ্যোগে মুসলিম লীগের জন্ম হয়। তবে এটি ছিল এক দীর্ঘ প্রক্রিয়ার ফসল।
সৈয়দ আহমেদের অনুগামীদের উদ্যোগ : সৈয়দ আহমেদের মৃত্যুর (১৮৯৮ খ্রি.) পর তাঁর অন্যতম দুই ঘনিষ্ঠ অনুগামী ভিকার-উল-মুলক ও মহসিন-উল্-মুলক এবং অন্যান্য নেতৃবৃন্দ মুসলিম স্বার্থ সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে একটি পৃথক রাজনৈতিক সংস্থা গঠনের কথা চিন্তা করেন। এই উদ্দেশ্যে ১৯০১ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর মাসে তাঁরা লক্ষুণৌতে এক ঘরায়া বৈঠকে মিলিত হন। তবে তাঁদের এই প্রথম প্রয়াস বিশেষ ফলপ্রসূ হয়নি।
ভিকার-উল-মুলক-এর পত্র ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে সাহারানপুরে একটি মুসলিম প্রতিষ্ঠান স্থাপিত হয়েছিল বলে জানা যায়। তবে ওই বছরের একটি উল্লেখযা েগ্য ঘটনা হল অক্টোবর মাসে পাইওনিয়ার পত্রিকার সম্পাদককে লেখা নবাব ভিকার -উল-মুলক – এর একটি পত্র। ওই পত্রে নবাব লেখেন, সংখ্যালঘু হিসেবে ভারতীয় মুসলিমদের নিজস্ব চাহিদাগুলি সরকারের কাছে উপস্থাপন করার জন্য কতকগুলি উপায় অবশ্যই বার করতে হবে। এইভাবে একটি রাজনৈতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে মুসলিমসমাজ আরও এক ধাপ এগিয়ে যায়।
রাজনৈতিক দল গঠনের দাবি:
সিমলা দৈীত্যের প্রাক্কালে মুসলিম নেতৃবৃন্দ লক্ষণৌতে এক বৈঠকে মিলিত হয়ে (১৬ সেপ্টেম্বর, ১৯০৬ খ্রি. ) নিজ সম্প্রদায়ের জন্য একটি সর্বভারতীয় রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে গভীরভাবে আলাচনা। করেন। পরে ১ অক্টোবর সিমলা দৌত্যে মুসলিম প্রতিনিধিবর্গ বিষয়টি গুরুত্বসহকারেই লর্ড মিন্টোর কাছে উত্থাপন করেন। এই দৌত্য প্রসঙ্গে আগা খাঁ তাঁর আত্মজীবনীতে লিখেছেন – সিমলা বৈঠকে। যোগদানকারী মুসলিম নেতারা এবিষয়ে একমত হয়েছিলেন যে, একটি স্বতন্ত্র সংগঠন ও সুনির্দিষ্ট কর্মপন্থার ওপরেই তাঁদের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে।
মুসলিম লীগ গঠন: অবশেষে ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দের ৩০ ডিসেম্বর নবাব ভিকার -উল-মুলক -এর সভাপতিত্বে প্রায় আট হাজার প্রতিনিধির উপস্থিতিতে ঢাকায় মহামেডান শিক্ষা সম্মেলন’- এসর্বভারতীয় মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়।
প্রথম সাপতি এবং মহসিন-উল-মুলক ও ভিকার-উল-মুলক যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন।
মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব সাম্প্রদায়িক ঐক্যে প্রতিবন্ধকতা : মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে হিন্দু মুসলমানের ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের পথে বাধা সৃষ্টি করে। মুসলিম লীগের অন্যতম উদ্দেশ্যই ছিল তরুণ মুসলিম বুদ্ধিজীবীদের জাতীয় কংগ্রেসে যা পান থেকে বিরত রাখা। এতে সাম্প্রদায়িক ঐক্য বিনষ্ট হওয়ায় জাতীয় আন্দোলনগুলি ও দুর্বল হয়ে পড়ে।
পৃথক রাজনৈতিক পথ ; মুসলিম লীগের গঠন ভারতীয় মুসলিম সম্প্রদায়কে জাতীয় রাজনীতির মূল ধারা থেকে সরিয়ে নিয়ে গিয়ে এক স্বতন্ত্র পথে প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে যা যোগদান করতে উৎসাহিত করে। জাতীয় কংগ্রেসের হিন্দু মুসলিম নির্বিশেষে সকলের প্রতিনিধিত্বের দাবিকে লিগ নস্যাৎ করে দেয়। মুসলিম লীগের বিভিন্ন কার্যকলাপে সম্প্রদায়িক ভেদনীতির সৃষ্টি হলে ব্রিটিশ সেই সুযােগের সদব্যবহার করে জাতীয় আন্দোলনকে সহজেই অবদমিত করে রাখে। যেমন- বঙ্গভঙ্গ – বিরাধী আন্দোলনে লিগের পরােক্ষ নির্দেশে মুসলমান সম্প্রদায় প্রচ্ছন্নভাবে বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করায় আখেরে সুবিধা হয় ব্রিটিশের।
বিচ্ছিন্নতাবাদী লীগ প্রমাণ করতে চায় যে, ভারতবাসীকে একটি জাতিতে ঐক্যবদ্ধ করা সম্ভব নয়। হিন্দু ও মুসলমান দুটি পথিক সত্তা, যাদের মধ্যে এক্যের কোন সম্ভাবনাই নেই। এই তত্ত্ব ভারতীয় রাজনীতিতে বিহিঃতাবাদে হাত শক্ত করে, যার পরিণতি মাটেই সুখকর হয়নি। লীগের প্রচ্ছন্ন মাদতে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ প্রসারের জন্য মুসলমানদের মধ্যে বিভিন্ন ইভেহার বিলি করা হয়। এইসব ইস্তেহারগুলিতে তীক্ষণ ভাষায় হিন্দুত্ববাদের বিরাধিতা করায় সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা বাড়ে।
অভিজা মুসলিম লীগের প্রাতষ্ঠায় বাঙালি মুসলমানরা মূল উদ্যোগ নিলেও বাংলার সঙ্গে এই লীগের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল না। বার স্বাই প্রেসিডেন্সির শিক্ষিত মুসলিম সম্প্রদায় ও মুসলিম লীগের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। লীগে মূলত উত্তর ভারতের অভিজাত মুসলিমদেরই প্রাধান্য বজায় ছিল।
জমিদার শ্রেণির স্বার্থরক্ষা; মুসলিম জমিদার ও জোতদার শ্রেণির সংকীর্ণ স্বার্থ রক্ষায় লিগ যথেষ্ট আগ্রহ দেখায়। লীগের লক্ষ্য বা কার্যপদ্ধতিতে ভারতের সমগ্র মুসলিম সম্প্রদায়ের আশা আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটেনি।
জিন্নাহর দ্বিজাতি তত্ত্ব: জাতিতত্তের বিশ্লেষণে একটি জনগােষ্ঠীকে তখনই জাতি বলা যায়, যার ভাষা, শিক্ষা, সংস্কৃতি, সাহিত্য, মনন, কৃষ্টি, ধর্ম এমনকি অর্থনীতি একটি একক সত্তায় পরিণতি লাভ করে। তবে মুসলিম লীগ সভাপতি এবং পরবর্তীতে পাকিস্তান রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা মােহাম্মদ আলী জিন্নাহ ভারতের হিন্দু ও মুসলমান এ দুটি ধর্মীয় সম্প্রদায়কে দুটি পৃথক জাতি হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন। এটিই মূলত জিন্নাহর ‘দ্বিজাতি তত্ত’।
পাকিস্তান আন্দোলনে দ্বিজাতি তত্তের প্রভাব জিন্নাহর ‘দ্বিজাতি তত্ত্ব ছিল ১৯৪০ সালের লাহাের প্রস্তাব বা পাকিস্তান প্রস্তাবের মূলভিত্তি। যদিও লাহাের প্রস্তাবে ‘পাকিস্তান’কিংবা দ্বিজাতি তত্ত্বর’ কথা উল্লেখ ছিল না। ধর্ম এক হলেই এক জাতি হয় না। বাংলাদেশের অভ, যদয় এর বড় প্রমাণ। তাই বলা চলে, জিন্নার দ্বিজাতি তত্ত্ব ছিল বিকৃত ও অসম্পূর্ণ এবং বিভ্রান্তকর তত্ত। এটি ছিল সাম্প্রদায়িকতার দোষে দুষ্টতত্ত।
বাঙালি জাতীয়তাবাদ ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদ হিসেবে পরিচিত। জাতি গঠনে যে একই ভাষাভাষী, গােষ্ঠীভুক্ত ও রক্ত-সম্বন্ধের অধিকারী হতে হয় তাও নয়। ভারত, মালয়েশিয়া, সুইজারল্যান্ড, কানাড়া এর উদাহরণ। জাতিসত্তা হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট ভখন্ডে। বসবাসকারী জনগােষ্ঠীর এক অভিন্ন ইতিবাচক সচেতনতা, একই রাষ্ট্রীয় কাঠামােয় বসবাসের ইচ্ছা এর প্রকাশিত রূপ। জিন্নাহর ‘দ্বিজাতি তত্ত’ বৈজ্ঞানিক ভিত্তির উপর রচিত ছিল না।
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ২য়-সপ্তাহ এসাইনমেন্ট উত্তর 2021
তা ছিল প্রধানত, অখন্ড ভারতে অনিবার্য হিন্দু এলিট গােষ্ঠী আধিপত্যের স্থলে ভারত বিভক্তি এবং আলাদা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এ থেকে স্থায়ী পরিত্রাণের লক্ষ্যে ভিন্ন ভিন্ন স্বার্থ, কৃষ্টি, ভাষা, অঞ্চল ও এতিহ্যে বিভক্ত ভারতীয়।
ঐক্যবদ্ধ হওয়ার একটি ভিত্তি। ভারতীয় উপমহাদেশে ইংরেওঁ শাসনের শুরু থেকেই মুসলমানদের প্রতি ইংরেজ সরকার সন্দিহান থাকে। মুসলমানরাও দীর্ঘসময় অসহযােগিতার নীতি অনুসরণ করে। ফলে জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে তারা পিছিয়ে পড়ে বা উপেক্ষিত থাকে।
অবিভক্ত ভারতে সংখ্যাগরিষ্ঠ ও অগ্রসর হিন্দু সম্প্রদায়ের স্থায়ী অধিপত্যের ভীতি মুসলমানদেরকে শঙ্কিত করে তােলে। ১৯৩৭ সালের নির্বাচনের পর বিভিন্ন প্রদেশে কংগ্রেসের নেতৃত্বে সরকার গঠন, হিন্দু অধিপত্যের বহিঃ প্রকাশ প্রভৃতি ভারতীয় মুসলমানদের ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে প্রচুভাবে ভাবিয়ে তােলে। ..
এমতাবস্থায় জিন্নাহ তাঁর দ্বিজাতি তত্তের ভিত্তিতে ভারতের বিভক্তি ও পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার দাবি উত্থাপন করলে ত ভারতীয় মুসলমানদের চেতনামূলে অগ্নিস্ফুলিঙ্গ জ্বালিয়ে দেয়। পৃথক আবাসভ,মি বা স্বাধীনতার স্বপ্ন তাদেরকে জাগিয়ে তােলে। পাকিস্তান আন্দোলন অপ্রতিরােধ্য হয়ে দাঁড়ায়।
পাকিস্তান ইস্যুতে ১৯৪৬ সালের নির্বাচনে মুসলিম লীগ বিপুল সাফল্য অর্জন করে। নির্বাচনােত্তর ব্রিটিশ সরকার ভারতে একটি মন্ত্রী মিশন প্রেরণ করে অত্যন্তশিথিল বন্ধনীর মধ্যে ভারতকে অখন্ডিত রাখার সর্বশেষ চেষ্টা করে। কিন্তু সফল হয় নি। অবশেষে জিন্নাহূ দ্বিজাতি তত্তের ভিত্তিতে ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্ত হয়। প্রতিষ্ঠালাভ করে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র, ভারত ও পাকিস্তান।
লাহাের প্রস্তাবের বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব:
১৯৪০ সালের ২৩ মার্চ অবিভক্ত পাঞ্জাবের রাজধানী লাহােরে নিখিল ভারত মুসলিমলীগের অধিবেশনে অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী শেরে বাংলা এ.কে. ফজলুল হক “লাহাের প্রস্তাব” পেশ করেন। বিপুল পরিমাণ উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে ২৪ মার্চ প্রস্তাবটি গৃহীত হয়।
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ২য়-সপ্তাহ এসাইনমেন্ট উত্তর 2021
নিচে লাহাের প্রস্তাবের মূল বৈশিষ্ট্যসমূহ দেওয়া হলােঃ
০১। ভৌগােলিক দিক থেকে সংলগ্ন এলাকাগুলােকে পৃথক অঞ্চল বলে গণ্য করতে হবে। ০২। উত্তর-পশ্চিম ও পূর্ব ভারতের সমস্ত অঞ্চলে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের সমন্বয়ে একাধিক স্বাধীন। সার্বভৌম রাষ্ট্রগঠন করতে হবে। এবং এ সমস্ত স্বাধীন রাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্য হবে সার্বভৌম ও স্বায়ত্তশাসিত।
০৩। ভারতের ও নবগঠিত মুসলিম রাষ্ট্রের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সাংস্কৃতিক, শাসনতান্ত্রিক ও অন্যান্য অধিকার ও স্বার্থ সংরক্ষণের কার্যকর ব্যবস্থা করা হবে। অর্থাৎ, সংখ্যালঘুদের স্বার্থরক্ষার সার্বিক ব্যবস্থা সংবিধানে থাকতে হবে।
০৪। দেশের যেকোনাে ভবিষ্যৎ শাসনতান্ত্রিক পরিকল্পনায় উক্ত বিষয়গুলােকে মৌলিক নীতি হিসেবে গ্রহণ করতে হবে।
১৯৪০ সালের লাহাের প্রস্তাব পূর্ব-পাকিস্তানের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এ প্রস্তাবের মাধ্যমে শােষিত, উপেক্ষিত এক বৃহৎ জনগােষ্ঠীর স্বাধীনতার প্রয়ােজনীয়তা স্পষ্টভাবে মানুষের সামনে উঠে আসে। মূলত লাহাের প্রস্তাবের পর থেকেই ভারতীয় উপমহাদেশের পট-পরিবর্তন শুরু হয়।
নিচে লাহাের প্রস্তাবের গুরুত্ব আলােচনা করা হলাে:
০১। দ্বিজাতি তত্ত্বের সূচনা: ভারতীয় উপমহাদেশে হিন্দুদের সংখ্যাগরিষ্ঠতার কারণে সংখ্যালঘু মুসলমানরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈষম্যের স্বীকার হয়। এ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য লাহাের প্রস্তাবে “এক জাতি, এক রাষ্ট্র” নীতির দাবি করা হয়। দাবির মূল কথাই হলাে হিন্দুদের জন্য একটি রাষ্ট্র এবং মুসলমানদের জন্য আলাদা একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্টা করতে হবে। এ নীতির প্রেক্ষিতেই মােহম্মদ আলী জিন্নাহ দ্বিজাতি তত্ত্বের ঘােষণা দেন।
০২। স্বাধীন বাংলাদেশের রূপরেখা: লাহাের প্রস্তাবের মূল বিষয়গুলাে পর্যালােচনা করলে দেখা যায়, বাংলার বাঘ এ.কে. ফজলুল হক বাংলাদেশকে স্বাধীন করার পথ সুগম করতে চেয়েছিলেন। লাহাের প্রস্তাব পাশ হলে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে নতুন স্বপ্নের সৃষ্টি হয়। যা ইংরেজদের শৃঙ্খল থেকে মুক্তি পাওয়ার আকাঙক্ষা প্রকাশ পায়।
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ২য়-সপ্তাহ এসাইনমেন্ট উত্তর 2021
০৩। মুসলমানদের স্বতন্ত্র স্বীকৃতি: ইংরেজ আমল শুরু হওয়ার পর থেকেই ভারতীয় মুসলমানদের আধিপত্য হ্রাস পেতে থাকে। মুসলমানরা সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়ে বাস করা শুরু করে। তাদের মধ্যে এই উপলদ্ধি হয় যে ভারত স্বাধীনতা অর্জন করলে মুসলমানরা হিন্দুদের তুলনায় পিছিয়ে থাকবে। এই প্রেক্ষিতে লাহাের প্রস্তাব উত্থাপিত হলে মুসলমানদের মধ্যে স্বতন্ত্র জাতিসত্ত্বার উপলদ্ধি ঘটে। যা স্বাধীন পাকিস্তান। সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
০৪। ভারত ও পাকিস্তানের সৃষ্টি লাহাের প্রস্তাবে ভারতীয় উপমহাদেশকে ভেঙ্গে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের। প্রস্তাব দেওয়া হয়। এর প্রেক্ষিতে হিন্দু ও মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে ভারত ও পাকিস্তান রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়। মুসলমান অধ্যুষিত এলাকা নিয়ে ১৪ আগষ্ট পাকিস্তান এবং হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকা নিয়ে ১৫ আগষ্ট ভারত রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়।
০৫। মুসলিম জাতিয়তাবাদের উন্মেষ: লাহাের প্রস্তাবের ভিত্তিতে ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলিম। জাতীয়তাবাদ তীব্র আকার ধারণ করে এবং বিভিন্ন পর্যায় অতিক্রম করে মনবিলে মকসুদের দিকে এগিয়ে যায়। ইংরেজদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে এ মুসলিম জাতীয়তাবাদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ২য়-সপ্তাহ এসাইনমেন্ট উত্তর 2021
০৬। ধর্মীয় ঐক্য সৃষ্টি: ১৯৩৭ সালের নির্বাচনে মুসলিমলীগ তেমন ভালাে ফল করতে পারেনি। এতে মুহম্মদ আলী জিন্নাহ বিচলিত হয়ে পড়েন। ১৯৪০ সালে লাহােরে অধিবেশন ডাকেন। এ অধিবেশনে। মুসলমানদের অধিকারের দাবিতে এ.কে ফজলুল হক প্রস্তাব উত্থাপন করেন, যা লাহাের প্রস্তাব নামে খ্যাত। এ প্রস্তাব পাশ হওয়ার পরে ভারতের সকল মুসলিম এটাকে স্বাগত জানায় এবং মুসলিম জনগােষ্ঠীর মধ্যে শক্তিশালী ঐক্য সৃষ্টি হয়।
উপরিউক্ত আলােচনার উপর ভিত্তি করে বলা যায় যে, লাহাের প্রস্তাব ছিল মুসলমানদের স্বার্থরক্ষা ও স্বতন্ত্র আবাসভূমি গঠনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রস্তাব, যা ভারতীয় উপমহাদেশ বিভক্ত করে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি রাষ্ট্র গঠন করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
প্রিয় শিক্ষার্থীদের জন্য আমাদের পরামর্শ, আমরা যেভাবে উত্তর/সমাধান দিব সেটা হুবহু না লিখে উত্তরটা নিজের ভাষায় লেখার চেষ্টা করতে।এতে করে শিক্ষার্থীরা অ্যাসাইনমেন্ট বা নির্ধারিত কাজে ভালো নম্বর অর্জন করতে পারবে ।
প্রতি সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্ট পাওয়ার জন্য kormojog.com এর ফেসবুক পেইজ কর্মযোগ লাইক এবং ফলো করে রাখ।